ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ৭১ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান, নগরীতে তালিকার বাইরে আরো অর্ধশতাধিক

অনলাইন ডেস্ক, চট্রগ্রাম ::

নগরীতে আড়াই শতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও পরিবেশ ছাড়পত্র আছে মাত্র ১২৯টির। ৭১টি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানকে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে ‘পরিবেশ ছাড়পত্র’ নেয়ার তাগাদা দেয়া হলেও ইতিবাচক সাড়া আসেনি। উল্লেখিত ২০০ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের বাইরে আরো অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের কোনো তালিকা নেই পরিবেশ অধিদপ্তরে। এতে কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তারও কোনো নজরদারি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাই যে যার মতো হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, নগরীর অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ইতোমধ্যে পরিবেশ সম্মতভাবে কার্যক্রম পরিচালনার আওতায় আনা হয়েছে। বাকীদেরকেও পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এরই মধ্যে নগরীর ১২৯টি পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে আমরা কড়া ব্যবস্থা নিব।
সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেয়া জরুরি। কিন্তু নগরীতে এখনো পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে রোগীরা।
ইতোমধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের মধ্যে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাব, সিএসসিআর স্ট্রোক ইউনিট ও সিএসসিআর প্রাইভেট লিমিটেড, চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতাল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, এপিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, সেনসিভ প্রাইভেট লিমিটেড, বেসিক ল্যাব, মেট্টো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডায়াসনিক সেন্টার, ইমেজ সূর্যের হাসি ক্লিনিক, ল্যাব ওয়ান হেলথ সার্ভিসেস, চিটাগাং বেল ভিউ লিমিটেড ও ট্রিটমেন্ট হসপিটাল লিমিটেড অন্যতম।
অন্যদিকে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই নগরীতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা ৭১টি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে পরিবেশ সম্মত ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে বারবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে সাড়া দিচ্ছে না তারা। ফলে যত্রতত্র মেডিকেল বর্জ্য ফেলায় এতে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে নতুন করে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিবেশ সম্মতভাবে পরিচালনা করা খুবই জরুরি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারটি সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরো বাড়ানো দরকার।
তিনি আরো জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন থাকা চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটি নিয়মের মধ্যে থাকলেও অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের নানা কারণে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে না হওয়ায় নিজেদের মতো করে তারা চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রোগীদের। এতে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে চিকিৎসা সেবা পাওয়া ও দেয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এখানকার চিকিৎসা সেবার উপর আস্থা হারাচ্ছেন রোগীরা। এ আস্থাহীনতা রোগীদেরকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। এতে দেশেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান ক্যাব সভাপতি নাজের।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশগুপ্তা জানান, এখানকার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ ছাড়পত্র আছে। মানুষের চিকিৎসার মতো একটি স্পর্শকাতর সেবায় পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করে কার্যক্রম চালানো আইনগতভাবে অবৈধ।

জানা গেছে, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব বর্জ্য দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- তরল ও কঠিন বর্জ্য। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করে এসব বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আশপাশে বাতাসে জীবাণু ছড়ায়। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
প্রসঙ্গত: চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে নগর ও জেলায় ৫০৪টি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ল্যাবের কোনো তালিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়েও নেই।

পাঠকের মতামত: